শিশুর অপুষ্টি | কেন হয়, কি করবেন?

বাংলাদেশে অনেক শিশু আজও সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। তাদের খাওয়াদাওয়ার অভাব, অসুখবিসুখ বা সঠিক যত্নের ঘাটতি থেকে দেখা দেয় অপুষ্টি। অপুষ্ট শিশুরা শুধু দুর্বল হয় না, বরং পড়াশোনায় পিছিয়ে যায়, বারবার অসুস্থ হয় এবং মানসিকভাবেও সমস্যায় পড়ে। একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে অপুষ্টি কী, কেন হয় এবং কীভাবে প্রতিরোধ করবেন – তা জানা খুব জরুরি।

শিশুর অপুষ্টি কেন হয়

সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৫ বছরের নিচে প্রায় ৩৮% শিশু কোনো না কোনোভাবে অপুষ্টির শিকার। এর মধ্যে প্রায় ২৮% শিশু খাটো (স্টান্টিং), ১০% শিশু অত্যন্ত শুকনো (ওয়েস্টিং) এবং ১৭% শিশু আন্ডারওয়েট। এভাবে ভাবলে বোঝা যায়, প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে প্রায় ৪ জনই অপুষ্টির সমস্যায় ভুগছে। এই সংখ্যা শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়—এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও সক্ষমতার বড় হুমকি। তাই পরিবার ও সমাজের সবাইকে এখনই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

ডাক্তারের পরামর্শ নিন ০৯৬৬৬-৭৮৭৮০৬

শিশুর অপুষ্টি কী?

শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য শরীরের দরকার বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান—যেমন ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন, চর্বি আর কার্বোহাইড্রেট। এগুলো নিয়মিত ও সঠিক পরিমাণে না পেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, ওজন বাড়ে না, এমনকি শারীরিক বৃদ্ধি থেমে যেতে পারে। এটাকেই আমরা অপুষ্টি বলি।

অপুষ্টিকে বলা যায় নীরব শত্রু। কারণ, শুরুতে এর লক্ষণগুলো খুব একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি শিশুর শরীর, মন ও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। অনেক সময় অভিভাবকরা মনে করেন, “শিশু তো খাচ্ছে”—কিন্তু খাওয়ার ধরণ ও মান যদি সঠিক না হয়, তবে সেই খাবার থেকেও পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া যায় না। ফলে ধীরে ধীরে অপুষ্টির সমস্যায় পড়তে হয়।

অপুষ্টির প্রধান লক্ষণসমূহ

শিশু অপুষ্টিতে ভুগলে শুরুতে তা সহজে বোঝা যায় না। ধীরে ধীরে শরীর ও মানসিক বিকাশে পরিবর্তন আসে। তাই কিছু সাধারণ লক্ষণ আগে থেকে জানা থাকলে অভিভাবকরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারেন।

অপুষ্টির লক্ষণ
  • বয়স অনুযায়ী ওজন না বাড়া
  • লম্বায় ছোট থাকা বা বৃদ্ধি ধীর হওয়া
  • বারবার অসুখে আক্রান্ত হওয়া
  • দুর্বলতা, ক্লান্তি বা অবসন্নতা
  • পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যাওয়া
  • চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া, ত্বক শুষ্ক ও ফ্যাকাশে হওয়া

শিশুর অপুষ্টি কেন হয়?

একজন অভিভাবক হিসেবে অনেকেই অবাক হন – “আমার সন্তান তো খাচ্ছে, তবুও কেন অপুষ্টি?” আসলে অপুষ্টির কারণ শুধু খাবারের অভাব নয়, আরও নানা বিষয় জড়িত থাকে।

  • সঠিক খাবার না পাওয়া: শুধু ভাত বা আলু খাওয়ালে পেট ভরে, কিন্তু শরীর প্রয়োজনীয় প্রোটিন বা ভিটামিন পায় না।
  • বারবার ডায়রিয়া ও অসুখ হওয়া: হজমের সমস্যা ও বারবার ডায়রিয়া হলে খাওয়া খাবার শরীরে ঠিকমতো কাজে লাগে না।
  • মায়ের দুধের অভাব: জীবনের প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের দুধই শিশুর প্রধান খাবার হওয়া উচিত। এতে ঘাটতি হলে সহজেই অপুষ্টি শুরু হয়।
  • অর্থনৈতিক সংকট: অনেক পরিবার প্রতিদিন পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারে না। ফলে শিশুর খাবারের তালিকা অসম্পূর্ণ থাকে।
  • অজ্ঞতা ও ভুল খাদ্যাভ্যাস: অনেক অভিভাবক জানেন না কোন বয়সে কোন খাবার দেওয়া উচিত। যেমন—ডিম, মাছ, শাকসবজি বাদ দিয়ে শুধু ভাত খাওয়ানো।
  • দীর্ঘমেয়াদি অসুখ বা জন্মগত সমস্যা: কিছু শিশুর শরীরে এমন সমস্যা থাকে, যার কারণে তারা খাবারের পুষ্টি ঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না।

শিশুর অপুষ্টির ধরণ

শিশুর অপুষ্টি এক রকম নয়, বরং বিভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। কারও উচ্চতা কমে যায়, কারও ওজন বয়স অনুযায়ী বাড়ে না, আবার কেউ হঠাৎ খুব শুকিয়ে যায়। প্রতিটি ধরণই শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

  • আন্ডারওয়েট (Underweight): বয়স অনুযায়ী ওজন কম।
  • স্টান্টিং (Stunting): বয়স অনুযায়ী উচ্চতা কমে যাওয়া।
  • ওয়েস্টিং (Wasting): উচ্চতার তুলনায় ওজন অস্বাভাবিকভাবে কম।

শিশুর অপুষ্টি হলে কী করবেন?

শিশুর মধ্যে অপুষ্টির লক্ষণ দেখা দিলে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই, তবে দেরিও করা যাবে না। সঠিক যত্ন, সুষম খাবার এবং ডাক্তারের পরামর্শে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুকে সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

অপুষ্টি হলে করণীয়
  • প্রথম ছয় মাস কেবল মায়ের দুধ দিন। এরপর ধীরে ধীরে ঘরে তৈরি খাবার দিন।
  • সুষম খাবার নিশ্চিত করুন। ভাত, ডাল, মাছ, ডিম, দুধ, ফল ও সবজি মিলিয়ে প্রতিদিনের খাবার সাজান।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় গুরুত্ব দিন। পরিষ্কার পানি পান করান, খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। ওজন ও উচ্চতা ঠিকভাবে বাড়ছে কি না তা খেয়াল রাখুন।
  • টিকা দিন। সব বাধ্যতামূলক টিকা সম্পূর্ণ করুন।
  • অসুখে দেরি না করে চিকিৎসা নিন। বিশেষ করে ডায়রিয়া হলে ORS খাওয়ানো জরুরি।

শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবারের কিছু উদাহরণ

অভিভাবকরা অনেক সময় বিভ্রান্ত হন—কোন খাবার শিশুর জন্য ভালো? আসলে খুব জটিল কিছু নয়। ঘরে যা পাওয়া যায়, তাই দিয়ে সহজ খাবার তৈরি করা যায়।

  • ভাত + ডাল + শাকসবজি
  • ডিম ভাজি বা সেদ্ধ ডিম
  • ছোট মাছ বা মুরগির মাংস
  • দুধ, দই
  • মৌসুমি ফল (কলা, আম, পেঁপে, কমলা)
  • ঘরে তৈরি খিচুড়ি

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

শিশুর বৃদ্ধি ও স্বাভাবিক স্বাস্থ্য নিয়ে অভিভাবকের মনে প্রায়ই প্রশ্ন থাকে—কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি? ছোটখাটো সমস্যা অনেক সময় বাড়িতেই সামলানো যায়, তবে কিছু লক্ষণ দেখলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • শিশুর ওজন বা উচ্চতা বয়স অনুযায়ী একদম না বাড়লে
  • বারবার ডায়রিয়া, জ্বর বা সংক্রমণে ভুগলে
  • খাওয়ার ইচ্ছা একেবারে কমে গেলে
  • হঠাৎ করে খুব দুর্বল হয়ে পড়লে
  • চোখ-মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলে বা শরীরে ফুলে যাওয়া দেখা দিলে
09666-787806

একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন

শিশুর অপুষ্টি নিয়ে দেরি করা কখনোই ঠিক নয়। ঘরে যতই যত্ন নিন না কেন, সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা ও চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে আপনি সরাসরি ডা. সালাহউদ্দিন মাহমুদ এর কাছে যেতে পারেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞ, যিনি অপুষ্টি সমস্যায় ভোগা শিশুদের জন্য বয়স ও শারীরিক অবস্থার সাথে মানানসই খাবার পরিকল্পনা ও চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন ০৯৬৬৬-৭৮৭৮০৬

শিশুর অপুষ্টি নিয়ে সাধারণ প্রশ্নোত্তর

যদি দেখেন শিশুর ওজন বাড়ছে না বা খুব দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, তাহলে দেরি না করে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যান। ডাক্তার শিশুর বয়স, ওজন ও স্বাস্থ্য দেখে খাবার পরিকল্পনা সাজিয়ে দেবেন।

প্রথম ৬ মাস শুধু মায়ের দুধই দিতে হবে। এরপর মায়ের দুধ চালিয়ে যেতে হবে এবং পাশাপাশি ঘরে তৈরি সুষম খাবার দিতে হবে অন্তত দুই বছর বয়স পর্যন্ত।

শিশুর খাবারে প্রতিদিন ভাত-ডাল, মাছ বা ডিম, শাকসবজি ও ফল রাখতে হবে। দুধ ও দই থাকলে আরও ভালো। শুধু ভাত খাওয়ানো যাবে না।

হ্যাঁ। অপুষ্টির কারণে শিশুর মস্তিষ্ক ঠিকভাবে বিকশিত হয় না। এতে পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যায় এবং শেখার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।

Call Receptionist
Call for Appointment
Popular Diagnostic Centre Ltd. (Shyamoli)
CTA Phone Icon 09666-787806
For More Information
CTA Phone Icon 01339364083
Make An Appoinment
Arrow