শিশুর জন্ডিসের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

শিশুদের মধ্যে জন্ডিস একটি খুবই সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা। অনেক সময় এটি জন্মের পরপরই দেখা দেয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাসজনিত কারণে হয়, বিশেষ করে হেপাটাইটিস এ, বি এবং ই সংক্রমণের কারণে। তবে অভিভাবকদের মনে রাখা দরকার যে শিশুর জন্ডিস সবসময় এক ধরনের নয়। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যা সঠিক সময়ে চিহ্নিত না করলে জটিল হয়ে উঠতে পারে।

শিশুদের জন্ডিস সাধারণত তখনই হয়, যখন লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়। এটি কখনো জন্মগত সমস্যা থেকে আসে, আবার কখনো সংক্রমণজনিত কারণে হয়। অনেক সময় কয়েক দিনের মধ্যে জন্ডিস কমে যায়, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে মারাত্মক রূপ নিতে পারে। তাই শিশুর জন্ডিসকে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক নয়। লক্ষণ দেখা মাত্রই অভিভাবকদের উচিত অভিজ্ঞ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।

ডাক্তারের পরামর্শ নিন: ০৯৬৬৬-৭৮৭৮০৬ শিশুর জন্ডিসের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

শিশুর জন্ডিসের কারণ

শিশুর শরীরে জন্ডিস হওয়ার মূল কারণ হলো রক্তে বিলিরুবিন জমে যাওয়া। স্বাভাবিক অবস্থায় লিভার বিলিরুবিন ভেঙে শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু যখন লিভার এই কাজটি করতে ব্যর্থ হয়, তখন ত্বক ও চোখে হলুদাভ ভাব আসে।

১. ভাইরাসজনিত জন্ডিস (হেপাটাইটিস এ, বি ও ই)

  • হেপাটাইটিস এ: দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়।
  • হেপাটাইটিস বি: সংক্রামিত রক্ত বা জন্মের সময় মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
  • হেপাটাইটিস ই: দূষিত পানি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেশি দেখা যায়।

২. নবজাতকের শারীরবৃত্তীয় জন্ডিস

  • জন্মের পর লিভারের পূর্ণ কার্যক্ষমতা না থাকার কারণে রক্তে বিলিরুবিন জমে যায়।
  • সাধারণত ৫–৭ দিনের মধ্যে কমে আসে।

৩. রক্তের অসামঞ্জস্যতা

  • মায়ের ও শিশুর রক্তের গ্রুপ না মিললে (Rh incompatibility বা ABO incompatibility) রক্তকণিকা ভেঙে অতিরিক্ত বিলিরুবিন তৈরি হয়।

৪. সংক্রমণ

  • নিউমোনিয়া, সেপসিস বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে শিশুর লিভার প্রভাবিত হয়ে জন্ডিস হতে পারে।

৫. লিভারের জন্মগত সমস্যা

  • যেমন বিলিয়ারি অ্যাট্রেসিয়া, যেখানে পিত্তনালি সঠিকভাবে কাজ করে না।
  • এ ধরনের সমস্যা হলে অস্ত্রোপচার বা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

৬. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

  • কিছু ওষুধ শিশুর লিভারে প্রভাব ফেলে জন্ডিস সৃষ্টি করতে পারে।

৭. অপরিণত শিশু (Premature baby)

  • যেসব শিশু নির্ধারিত সময়ের আগে জন্মায়, তাদের লিভার পুরোপুরি পরিণত না হওয়ায় জন্ডিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

শিশুর জন্ডিসের সাধারণ লক্ষণ

শিশুর জন্ডিস সাধারণত চোখ ও ত্বকের রঙ পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তবে এর সঙ্গে আরও কিছু লক্ষণ অভিভাবকদের নজরে রাখা জরুরি। অভিভাবকরা যে বিষয়গুলো লক্ষ্য করবেন:

  • চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া
  • প্রস্রাব গাঢ় রঙের হওয়া
  • মল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
  • শিশুর অতিরিক্ত ক্লান্তি
  • খাওয়ার অনীহা বা বমি
  • জ্বর বা পেটব্যথা
শিশুর জন্ডিস নিয়ে উদ্বিগ্ন? অভিজ্ঞ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন!

দেশের অভিজ্ঞ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে এখনই জেনে নিন করণীয়।

পরামর্শ পেতে কল করুন: ০৯৬৬৬-৭৮৭৮০৬

শিশুদের ওপর হেপাটাইটিস এ, বি ও ই এর প্রভাব

হেপাটাইটিস এ, বি ও ই শিশুদের লিভারে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলো স্বল্পমেয়াদি জন্ডিস থেকে শুরু করে দীর্ঘস্থায়ী লিভার জটিলতা পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে।

হেপাটাইটিস এ (HAV)
  • সাধারণত স্বল্পমেয়াদি জন্ডিস সৃষ্টি করে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে উপসর্গ হালকা হতে পারে।
  • তবে সঠিক চিকিৎসা না নিলে পানিশূন্যতা ও দুর্বলতা বেড়ে যায়।
হেপাটাইটিস বি (HBV)
  • শিশুদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক।
  • জন্মের সময় সংক্রমিত হলে দীর্ঘমেয়াদি (ক্রনিক) হেপাটাইটিস হতে পারে।
  • ভবিষ্যতে লিভার সিরোসিস বা ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।
হেপাটাইটিস ই (HEV)
  • শিশুদের মধ্যে তীব্র সংক্রমণ ঘটায়।
  • মারাত্মক জন্ডিস ও পানিশূন্যতা হতে পারে।
  • অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি প্রয়োজন হয়।

বাচ্চাদের জন্ডিসের চিকিৎসা

বাচ্চাদের জন্ডিস সাধারণত লিভারের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। এটি ভাইরাস, রক্তের অসামঞ্জস্যতা বা জন্মগত কারণে হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে বেশিরভাগ শিশুই দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। নিচে শিশুদের জন্ডিসের চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

হেপাটাইটিস এ ও ই:
  • বিশেষ কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই।
  • বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পানি, তরল খাবার ও সহায়ক চিকিৎসাই কার্যকর।
হেপাটাইটিস বি:
  • জন্মের পর ভ্যাকসিন নেওয়া সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
  • সংক্রমিত শিশুর ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ও দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ দরকার।
অন্য কারণের চিকিৎসা:
  • রক্তের অসামঞ্জস্যতার ক্ষেত্রে এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন লাগতে পারে।
  • সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে।
  • জন্মগত লিভার সমস্যার জন্য অস্ত্রোপচার বা বিশেষায়িত চিকিৎসা দরকার।

জন্ডিস প্রতিরোধের উপায়

শিশুদের জন্ডিস অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করা সম্ভব। টিকা গ্রহণ, নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যকর খাবার এতে বড় ভূমিকা রাখে। অভিভাবকদের সচেতনতা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষাই শিশুকে জন্ডিসের ঝুঁকি অনেকটা কমাতে পারে।

  • হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন অবশ্যই জন্মের পরপর নিতে হবে।
  • সবসময় বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানো।
  • হাত ধোয়ার অভ্যাস করানো।
  • গর্ভবতী মায়ের হেপাটাইটিস পরীক্ষা করা।

কখন শিশুকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া জরুরি?

শিশুর জন্ডিস সাধারণত কিছুদিনে ভালো হয়ে যায়, তবে সবসময় সেটা নাও হতে পারে। যদি জন্ডিস দীর্ঘস্থায়ী হয় বা শিশুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে, তবে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শিশুর সুস্থতায় বড় ভূমিকা রাখে। যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিতে হবে:

  • ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জন্ডিস থাকছে
  • শিশু দুর্বল হয়ে যাচ্ছে বা খেতে চাইছে না
  • প্রস্রাব গাঢ় রঙের, মল ফ্যাকাশে
  • বমি, জ্বর বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন

শিশুদের জন্ডিসকে কখনোই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এর পেছনে হেপাটাইটিস ভাইরাস ছাড়াও রক্তের অসামঞ্জস্যতা, সংক্রমণ বা জন্মগত সমস্যা থাকতে পারে। বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি দীর্ঘমেয়াদে শিশুর জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। তাই সচেতনতা, টিকা, নিরাপদ পানি ও খাবার এবং সময়মতো চিকিৎসা শিশুকে সুরক্ষিত রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

শিশুর জন্ডিসে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারে ডা. সালাহউদ্দিন মাহমুদ

যদি আপনার সন্তানের মধ্যে জন্ডিসের কোনো লক্ষণ দেখা যায়, দেরি না করে ডা. সালাহউদ্দিন মাহমুদ, শিশু গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিলিভার রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন। তার অভিজ্ঞতা ও সঠিক চিকিৎসা আপনার শিশুর সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নিন: ০৯৬৬৬-৭৮৭৮০৬

শিশুর জন্ডিস নিয়ে সাধারণ প্রশ্নোত্তর

হ্যাঁ, অনেক নবজাতকের জন্মের পর প্রথম সপ্তাহে জন্ডিস দেখা দেয়। সাধারণত এটি কয়েক দিনের মধ্যে কমে যায়, তবে মাত্রা বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়।

নবজাতকের লিভারের অপরিপক্বতা সবচেয়ে সাধারণ কারণ। এছাড়া হেপাটাইটিস এ, বি ও ই ভাইরাস, রক্তের অসামঞ্জস্যতা ও সংক্রমণও বড় কারণ।

ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব গাঢ় রঙের হওয়া, মল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, খাওয়ার অনীহা ও দুর্বলতা – এগুলো সাধারণ লক্ষণ।

চিকিৎসা কারণভিত্তিক হয়। কিছু ক্ষেত্রে শুধু পর্যবেক্ষণ ও সাপোর্টিভ কেয়ারই যথেষ্ট, আবার গুরুতর হলে ওষুধ, ফটোথেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

হ্যাঁ, সম্ভব। হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন জন্মের পরপর দেওয়া উচিত, নিরাপদ পানি ও খাবার খেতে হবে এবং মায়ের হেপাটাইটিস টেস্ট করা জরুরি।

Other pages you may be interested in...

Expert child abdominal migraine treatment in Bangladesh by Dr. Salahuddin Mahmud. Safe care for kids with recurrent abdominal pain. Call for an appointment!

Call Receptionist
Call for Appointment
Popular Diagnostic Centre Ltd. (Shyamoli)
CTA Phone Icon 09666-787806
For More Information
CTA Phone Icon 01339364083
Make An Appoinment
Arrow