শিশুর ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি, চোখ চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া বা শ্বাসকষ্ট, এমন সমস্যাগুলো অনেক সময় এলার্জির কারণে হয়। বাবা-মায়ের জন্য এটি দুশ্চিন্তার বিষয়, কারণ ছোট্ট শিশুর অস্বস্তি সহ্য করা কঠিন। তবে চিন্তার
কিছু নেই। সঠিক কারণ জানা ও সময়মতো চিকিৎসা নিলে শিশুর এলার্জি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে এলার্জি একটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। শিশুরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ার কারণে, তাদের ক্ষেত্রে অধিক দেখা যায়। বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা লাঘবের জন্য এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো—শিশুর এলার্জি কী, কেন
হয়, এবং এর চিকিৎসা ও ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত।
এলার্জি হচ্ছে শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন কিছু পদার্থ যেমন ধুলা, পোলেন, খাবার বা ওষুধের সংস্পর্শে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সেটিকে “ক্ষতিকর” মনে করে প্রতিক্রিয়া দেখায়।
ফলস্বরূপ ত্বকে র্যাশ, নাক বন্ধ, চোখ চুলকানো, কাশি, বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
শিশুদের এলার্জি কেন হয়?
শিশুদের শরীর খুব সংবেদনশীল। অনেক সময় জন্মগতভাবে বা বংশগত কারণে এলার্জির ঝুঁকি বেশি থাকে। নিচে কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো:
বংশগত কারণ: যদি বাবা-মায়ের কারও এলার্জি বা হাঁপানির ইতিহাস থাকে, শিশুরও ঝুঁকি বাড়ে।
ধুলা ও ময়লা: ঘরের ধুলা, কার্পেট, পোষা প্রাণীর লোমে থাকা ডাস্ট মাইট এলার্জির বড় উৎস।
খাদ্যজনিত এলার্জি: দুধ, ডিম, বাদাম, সয়াবিন, মাছ বা গমজাত খাবারে অনেক শিশুর অ্যালার্জি দেখা যায়।
আবহাওয়ার পরিবর্তন: মৌসুম বদলালে ঠান্ডা, পোলেন বা আর্দ্র পরিবেশে প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
ওষুধ বা ইনজেকশন: কিছু শিশুর শরীর নির্দিষ্ট ওষুধ সহ্য করতে পারে না।
শিশুর এলার্জির সাধারণ লক্ষণ
শিশুর এলার্জি এখন একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে শহুরে পরিবেশে বেড়ে ওঠা বাচ্চাদের মধ্যে। ধুলাবালি, খাবার বা আবহাওয়ার পরিবর্তনে হঠাৎ করে ত্বক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া বা কাশি দেখা দিতে পারে। সময়মতো সঠিক যত্ন ও
চিকিৎসা নিলে শিশুর এলার্জি সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিচে এলার্জির বিভিন্ন ধরন অনুযায়ী লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হলো:
শিশু যদি বারবার একই সমস্যায় ভোগে, যেমন: হাঁচি, কাশি, ত্বকের ফুসকুড়ি—তাহলে অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞ বা অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ডাক্তার প্রয়োজনে নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলি করতে পারেন:
স্কিন প্রিক টেস্ট: ত্বকে সামান্য অ্যালার্জেন দিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
রক্ত পরীক্ষা (IgE Test): শরীরে এলার্জি অ্যান্টিবডির মাত্রা নির্ণয় করে।
শিশুর এলার্জির চিকিৎসা
এলার্জি ছোটদের জন্য বেশ কষ্টদায়ক হতে পারে—ত্বকে র্যাশ, নাক দিয়ে পানি পড়া, বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। সঠিক কারণ চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু করলে শিশুর অস্বস্তি দ্রুত কমে যায়। তাই শিশুর এলার্জি হলে দেরি না
করে অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে ভালো।
চিকিৎসা নির্ভর করে এলার্জির কারণ ও উপসর্গের উপর। সাধারণত নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়:
অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলা: যেটি থেকে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, সেটি চিহ্নিত করে দূরে রাখা।
ওষুধ সেবন:
অ্যান্টিহিস্টামিন সিরাপ বা ট্যাবলেট
নাসাল স্প্রে বা ইনহেলার (শ্বাসজনিত এলার্জির জন্য)
ত্বকের জন্য মেডিকেটেড ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট
ইমিউনোথেরাপি (Allergy shots): দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা, যা ইমিউন সিস্টেমকে অ্যালার্জেনের সঙ্গে অভ্যস্ত করে।
টিপস: শিশুকে কখনোই নিজের সিদ্ধান্তে ওষুধ দেবেন না। শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ডোজ এবং সময় নির্ধারণ করা উচিত।
বাচ্চাদের এলার্জির ঘরোয়া প্রতিকার ও যত্ন
চিকিৎসার পাশাপাশি বাড়িতেও কিছু ব্যবস্থা নিলে শিশুর এলার্জি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যেমন:
ঘর প্রতিদিন পরিষ্কার করুন, বিশেষ করে বিছানা, পর্দা ও কার্পেট।
পরিষ্কার পোশাক পরিধান করানো।
পোষা প্রাণী থাকলে নিয়মিত গোসল করান ও শিশুর ঘরে ঢুকতে না দিন।
শিশুর খাবারে নতুন কিছু যোগ করার আগে অল্প পরিমাণে দিন এবং প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন।
শিশুকে ধুলাবালির বাইরে খেলতে পাঠালে মুখে মাস্ক ব্যবহার করান।
ঘরের বাতাস চলাচল ভালো রাখুন, আর্দ্রতা কমান।
ঠান্ডা-গরমে হঠাৎ পরিবর্তন থেকে শিশুকে বাঁচান।
শিশুর খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতা
শিশুর এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা খুবই জরুরি। অনেক সময় ভুল খাবার বা অল্প বয়সে নতুন খাবার খাওয়ানো এলার্জির ঝুঁকি বাড়ায়। তাই শিশুর খাবার বাছাই করতে হবে ধীরে, বুঝে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে।
শিশুর খাদ্যে এলার্জি থাকলে নিচের নিয়মগুলো মেনে চলা জরুরি:
নতুন খাবার একবারে একটি করে দিন, যেন বোঝা যায় কোন খাবার থেকে সমস্যা হচ্ছে।
বাদাম, ডিম, মাছ বা দুধে সমস্যা হলে বিকল্প খাবার দিন যেমন ডাল, ফল, সবজি ইত্যাদি।
শিশুর এলার্জির সাধারণ লক্ষণ হলো ত্বকে লালচে দাগ, চুলকানি, নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি বা কাশি। কেউ কেউ খাবার খাওয়ার পর বমি, ডায়রিয়া বা ঠোঁট ফুলে যাওয়ার সমস্যায় ভোগে। এমন উপসর্গ বারবার দেখা দিলে তা
এলার্জির লক্ষণ হতে পারে।
এলার্জি অনেক সময় সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না, তবে সঠিক চিকিৎসা ও যত্নে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। শিশুর শরীর কোন জিনিসে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তা চিহ্নিত করা জরুরি। অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সালাহউদ্দিন
মাহমুদের পরামর্শে চিকিৎসা নিলে শিশুর সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।
প্রথমে যেই খাবার থেকে সমস্যা হচ্ছে তা খাওয়ানো বন্ধ করুন। শিশুকে প্রচুর পানি দিন এবং ডাক্তারের পরামর্শে হালকা খাবার দিন। কখনোই নিজে থেকে ওষুধ দেবেন না—ডা. সালাহউদ্দিন মাহমুদের মতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নিন।
হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে যায়। ঘর পরিষ্কার রাখা, ধুলাবালি ও পোষা প্রাণীর লোম থেকে শিশুকে দূরে রাখা, তাজা খাবার খাওয়ানো—এসব অভ্যাস শিশুর এলার্জি কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ
নেওয়া জরুরি।
শিশু যদি শ্বাস নিতে কষ্ট পায়, চোখ-মুখ ফুলে যায় বা শরীরে ফুসকুড়ি ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিত। এসব উপসর্গ কখনো গুরুতর হতে পারে। তাই দেরি না করে অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সালাহউদ্দিন
মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।