শিশুর ঘন ঘন জ্বর কেন হয়? | কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার

শিশুদের অসুস্থতার মধ্যে জ্বর খুবই পরিচিত একটি শব্দ। শিশুরা সাধারণত শারীরিকভাবে দুর্বল ও সংবেদনশীল হওয়ায়, যেকোনো রোগ-জিবানু সহজেই আক্রমন করতে পারে। আর যেকোনো রোগের আক্রমনের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে জ্বর অনুভুত হয়। এ কারণেই শিশুর ঘন ঘন জ্বর হয়ে থাকে। তাছাড়া মশার কামড়েও নানা রকম ভাইরাস জ্বর হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, একটি শিশু মাসে কয়েকবার জ্বরে ভুগছে। বিষয়টি বাবা-মায়ের জন্য অত্যন্ত দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার অনেক সময় বাবা-মায়ের সঠিক যত্ন, পরিচর্যা ও পরিচ্ছন্নতার অভাবেও শিশুর জ্বর আসতে পারে। তাই শিশুর ঘন ঘন জ্বর আসাটা প্রত্যেক বাবা-মায়ের জন্য বেশ উদ্বেগের।

শিশুর ঘন ঘন জ্বর আসার কিছু প্রাথমিক ধারণা হয়তো পেলাম, কিন্তু শিশুর সঠিক পরিচর্যার এবং চিকিৎসার জন্য বিস্তারিত জানা জরুরি। এই ব্লগে আমরা জানব এর সম্ভাব্য কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত।

ডাক্তারের পরামর্শ নিন: 09666-787806 শিশুর ঘন ঘন জ্বর কেন হয়

শিশুর জ্বরের সাধারণ লক্ষণসমূহ

শিশুর জ্বর সম্পর্কে সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বনের জন্য, সবার আগে বুঝতে হবে শিশুর জ্বরের লক্ষণগুলো আসলে কেমন হয়ে থাকে। শিশুর আচরন ও অনুভূতি সম্পর্কে সঠিকভাবে খেয়াল রাখাও জরুরি। অনেক বাবা-মা অজ্ঞতা কিংবা সচেতনতার অভাবে জ্বর শুরুর দিকে বুঝতে পারেন না। যার ফলে শিশুর অসুস্থতা তীব্রতর হয়। নিচের লক্ষণগুলো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে, বুঝে নিবেন আপনার শিশু জ্বরে আক্রান্ত।

শিশুর জ্বরের সাধারণ লক্ষণসমূহ
01
শরীর গরম হয়ে যাওয়া

শিশুর কপাল, গাল, হাত-পা গরম অনুভব হওয়া। তাপমাত্রা সাধারণত ১০০.৪°F (৩৮°C) বা তার বেশি হলে জ্বর হিসেবে ধরা হয়।

02
দুর্বলতা ও অবসাদ

শিশু আগের মতো সক্রিয় থাকে না, ক্লান্ত ও অস্থির দেখায়।

03
ঘুমের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বা ঘুমে অস্থিরতা

জ্বরের সময় শিশু অধিক ঘুমাতে পারে বা ঘুম ভেঙে কান্না করতে পারে।

04
খাওয়া-দাওয়ার অনীহা

দুধ বা খাবার খেতে চায় না, মাঝে মাঝে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

05
মাথা ব্যথা ও শরীর ব্যথা

বড় শিশুদের ক্ষেত্রে মাথা ও শরীরে ব্যথার কথা বলতে পারে বা কান ধরে বসে থাকতে পারে।

06
চোখ লাল হওয়া ও পানি পড়া

ভাইরাল ইনফেকশনের কারণে চোখ লাল হয়ে যেতে পারে।

07
দ্রুত শ্বাস নেওয়া বা শ্বাসকষ্ট

জ্বরের পাশাপাশি যদি দ্রুত শ্বাস বা শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তবে তা তাৎক্ষণিক চিকিৎসার সংকেত।

08
খিঁচুনি

কিছু শিশুর ক্ষেত্রে হঠাৎ খিঁচুনি হতে পারে, যাকে ‘ফেব্রাইল সিজার’ বলা হয়।

09
ঠান্ডা লাগা বা কাঁপুনি

শরীর গরম হলেও শিশু কাঁপতে পারে, যা শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার ইঙ্গিত।

শিশুর ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণগুলো কি কি?

শিশুরকে নিরাপদ ও ঘন ঘন জ্বর আসা থেকে রক্ষা করতে হলে মাদের জানতে হবে, শিশুর বার বার জ্বর আসার আসলে প্রকৃত কারণ কি? এই সেকশনে আমরা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করছি, যাতে শিশুর বাবা-মায়েরা অধিক সচেতন হতে পারে। চলুন যেনে নেওয়া যাক:

01
র্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় অনেক কম থাকে, বিশেষ করে নবজাতক ও ১-৫ বছর বয়সীদের। তাই তারা সহজেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং জ্বর হয়।

02
ভাইরাল সংক্রমণ

শিশুরা খেলাধুলা, স্কুল বা ডে-কেয়ারে গিয়ে অন্য বাচ্চাদের সংস্পর্শে আসে, যেখানে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। সাধারণ সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, বা হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ থেকে ঘন ঘন জ্বর হতে পারে।

03
টনসিলের সমস্যা

টনসিল ইনফেকশন (Tonsillitis) অনেক শিশুর জ্বরের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে গলা ব্যথা, খাবারে অরুচি ও বারবার জ্বর দেখা দেয়।

04
প্রস্রাবে ইনফেকশন (UTI)

বিশেষ করে মেয়েশিশুদের মধ্যে ইউরিন সংক্রমণ হতে দেখা যায়, যা জ্বরের একটি সাধারণ কারণ।

05
নিউমোনিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন

নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস ইত্যাদি সমস্যাও শিশুর ঘন ঘন জ্বরের কারণ হতে পারে।

06
এলার্জি ও পরিবেশ দূষণ

ধুলো, ধোঁয়া, অ্যালার্জেন জাতীয় উপাদান শিশুর শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং সেইসঙ্গে জ্বর দেখা দিতে পারে।

শিশুর জ্বর হলে বাসা-বাড়িতে কীভাবে যত্ন নিবেন?

শিশু জ্বরে আক্রান্ত হলে বাবা-মার উদ্বিগ্ন হওয়াটা বেশ স্বাভাবিক। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে যত্ন নিলে অধিকাংশ জ্বর ঘরে বসেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিচে শিশু জ্বরের সময় বাসায় করণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো:

01
শরীরের তাপমাত্রা নিয়মিত মাপুন

ডিজিটাল থার্মোমিটার দিয়ে শিশুর তাপমাত্রা পরিমাপ করুন প্রতি ৪-৬ ঘণ্টা পর। যদি তাপমাত্রা ১০১°F বা তার বেশি হয়, তবে সতর্ক হতে হবে।

02
পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার দিন

জ্বরের সময় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। শিশুকে বেশি বেশি তরল খাবার যেমন—সাদা ভাতের মাড়, লেবু পানি, ডাবের পানি, মায়ের বুকের দুধ বা শিশুর বয়স অনুযায়ী স্যুপ দিতে পারেন।

03
পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম নিশ্চিত করুন

জ্বরের সময় শরীর স্বাভাবিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই শিশুকে জোর করে খেলা করতে না দিয়ে বরং আরামদায়ক পরিবেশে বিশ্রাম নিতে দিন।

04
হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরান

গা ঘেমে গেলে জ্বর আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই হালকা সুতি কাপড় পরাতে হবে এবং বেশি কাপড় বা কম্বল দিয়ে মুড়ে রাখা যাবে না।।

05
পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন

শিশুর ব্যবহৃত তোয়ালে, গ্লাস, বাটি, জামাকাপড় ইত্যাদি আলাদা করে পরিষ্কার রাখুন। ভাইরাস যেন ঘরের অন্য সদস্যদের মধ্যে না ছড়ায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

06
কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিন

তাপমাত্রা বেশি হলে মাথা, হাত-পা ও শরীর কুসুম গরম পানিতে ভেজা কাপড় দিয়ে আলতো করে মুছিয়ে দিন। এতে জ্বর কিছুটা কমে আসে।

07
ওষুধ প্রয়োগে সতর্ক থাকুন

জ্বরের ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।

শিশুর জ্বর | কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে?

অনেক সময় দেখা যায়, পর্যাপ্ত যত্ন নেওয়ার পরেও শিশুর জ্বর কমছে না। সেক্ষেত্রে অন্যকোনো রোগের লক্ষণ থাকতে পারে বা জ্বরের সাথে যদি অন্যান্য লক্ষ্মণ প্রকাশ পায়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন, এই বিষয় নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন থাকে আমাদের। যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন:

  • প্রতি মাসে ২ বার বা তার বেশি জ্বর হওয়া
  • ৩ দিনের বেশি জ্বর স্থায়ী হওয়া
  • খাওয়া-দাওয়া একদম বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • অতিরিক্ত ঘুম, দুর্বলতা বা খিঁচুনি
  • শরীরের কোনো নির্দিষ্ট অংশ ফুলে যাওয়া বা ব্যথা

শিশুর বার বার জ্বর আসা প্রতিরোধে করণীয়

শিশুর বার বার জ্বর আসার প্রধান একটি কারণ হচ্ছে শরীর দুর্বল থাকা, যার কারণে সহজেই রোগ-জিবানু আক্রমন করে। খাদ্যাভ্যাসও অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আমরা আলোচনা করব শিশুর ঘন ঘন জ্বর আসা প্রতিরোধে করনীয় কি। আসুন জেনে নিই:

পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

শিশুর হাত-মুখ ধোয়া, খেলনা পরিষ্কার রাখা এবং সঠিকভাবে টয়লেট ব্যবহার শেখানো অত্যন্ত জরুরি।

সুষম খাদ্য ও পর্যাপ্ত পানি

পুষ্টিকর খাবার ও তরলজাতীয় পানীয় শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম

শিশুর ঘুমের অভাব হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ঘুম ভালো হলে শরীর নিজেই জীবাণুর সঙ্গে লড়তে পারে।।

টিকা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা

জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় সব টিকা দেওয়া এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত প্রতিরোধমূলক টিকা নেওয়া উচিত।

পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় সব টিকা দেওয়া এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত প্রতিরোধমূলক টিকা নেওয়া উচিত।

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া

বারবার জ্বর হলে, বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকের (Pediatrician) পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যার মূল কারণ জানা যাবে।

একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন

শিশুর ঘন ঘন জ্বর হওয়া সাধারণ একটি সমস্যা, তবে মাঝে মাঝে বেশ আশঙ্কার কারণ হতে পারে। কি কারণে জ্বর আসছে, সেটা বোঝা বেশ জরুরি। এজন্য প্রয়োজন একজন বিশেষজ্ঞ শিশু ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। Prof. Dr. Salahuddin Mahmud, বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। তিনি ২৩ বছরের অধিক সময় ধরে শিশুদের জ্বর, অপুষ্টি, পেটের সমস্যা, লিভার ও অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতার সাথে সেবা প্রদান করে আসছেন। তাই জ্বর সংক্রান্ত শিশুর সমস্যা আর দির্ঘায়ীত না করে দ্রুত এক্সপার্ট ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

যোগাযোগ করুন:

শিশুর জ্বর সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরোপুরি বিকশিত না হওয়াতে তারা সহজেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে ডে-কেয়ার, স্কুল, বা খেলার মাঠে সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। এভাবেই ঘন ঘন জ্বর আস্তে পারে।

সাধারণত সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টনসিলাইটিস, ইউআরআই (Upper Respiratory Infection), ও মাঝেমধ্যে কানের সংক্রমণ শিশুদের মধ্যে ঘন ঘন জ্বরের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বর সাধারণত মারাত্মক নয়। তবে খুব ঘন ঘন হলে তা অপুষ্টি, দুর্বলতা বা অন্যান্য রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে।

যদি জ্বর ৩ দিন বা তার বেশি স্থায়ী হয়, সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার অনীহা, ঘুমে ব্যাঘাত, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি বা অস্বাভাবিক দুর্বলতা দেখা যায়—তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

হাত ধোয়ার অভ্যাস শেখানো, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা, নিয়মিত টিকাদান ও সঠিক পরিচর্যা জ্বর প্রতিরোধে সহায়তা করে।

Call Receptionist
Call for Appointment
Popular Diagnostic Centre Ltd. (Shyamoli)
CTA Phone Icon 09666-787806
For More Information
CTA Phone Icon 01339364083
Make An Appoinment
Arrow