শিশুর পেট খারাপ যেমন চিন্তার কারণ, তেমনি কোষ্ঠকাঠিন্যও অনেক সময় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একটি শিশুর যদি নিয়মিত মলত্যাগ না হয়, বা মল শক্ত হয়ে যায় এবং বাচ্চা কষ্ট পায়, তবে তা কোষ্ঠকাঠিন্য হিসেবে চিহ্নিত হয়। দিন দিন শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার প্রবনতা বেড়েই চলছে। জাঙ্ক ফুড, গরুর দুধ, ও কম আশ যুক্ত খাবার গ্রহণের ফলে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এছাড়া দীর্ঘ সময় মল আটকে রাখার ফলেও এই সমস্যা হয়ে থাকে। নিয়মিত শিশুর মলত্যাগ না করা এবং বাবা-মায়ের অসচেতনতা অনেকাংশে দায়ী।
গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রাদুর্ভাব প্রায় ১৯% এবং কার্যকরী কোষ্ঠকাঠিন্যের হার প্রায় ১১%। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, কোষ্ঠকাঠিন্য আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে ৭২.৬৩% কম ফাইবারযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে, ৩২.৯৬% গরুর দুধ সেবন করে, এবং ২৮.৪৯% জাঙ্ক ফুড খায়। এছাড়াও, স্কুলে অপর্যাপ্ত বা অস্বাস্থ্যকর টয়লেট সুবিধা এবং দীর্ঘ সময় ধরে একাডেমিক কার্যক্রমে ব্যস্ততা কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
একারনেই শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে অভিভাবকরা বেশ দুশ্চিন্তায় থাকেন। তবে চিন্তার কিছু নেই, শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার যুগান্তকারী কিছু পরামর্শ ও সঠিক চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেছেন, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার—ডা. সালাহউদ্দিন মাহমুদ।
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যে বেশ যন্ত্রণাদায়ক ও অস্বস্থিকর। শিশুর এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত পরিত্রানের জন্য প্রয়োজন কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারা। এখানে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য চিহ্নিত করার কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ করা
মল শক্ত বা পাথরের মতো হওয়া
মলত্যাগের সময় ব্যথা পাওয়া বা কান্না করা
পেট ফাঁপা বা ফুলে থাকা
খাওয়ার ইচ্ছা কমে যাওয়া
ঘন ঘন পেট ব্যথা
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয়, সেজন্য বাবা-মাকে জানতে হবে ঠিক কি কারণে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। শিশুর সঠিক পরিচর্যা ও মা-বাবার সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ উল্লেখ করা হচ্ছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক:
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন: শিশুর ডায়েটে ফাইবার কম থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া: ডিহাইড্রেশন বা পানি কম খাওয়ার কারণে মল শক্ত হয়ে যায়।
দুধের পরিবর্তন: মায়ের বুকের দুধ থেকে ফর্মুলা বা গরুর দুধে পরিবর্তন অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হয়।
টয়লেটের ভয় বা অনীহা: অনেক শিশু টয়লেট যেতে ভয় পায় বা অলসতা করে ধরে রাখে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
মানসিক চাপ বা নতুন পরিবেশে থাকা
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া কিছু কার্যকর উপায়
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য পুরোপুরি নির্ভর করে জীবন যাপনের পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাসের ওপর। এখানে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কিছু কার্যকারী ঘরোয়া টিপস শেয়ার করছি।
১. সঠিক খাদ্য নির্বাচন করুন
শিশুর খাবারে ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন ফল (আপেল, নাশপাতি, পেঁপে), সবজি (গাজর, কুমড়া) এবং লাল আটা বা ওটস যোগ করুন। এগুলো সহজে হজম হয় ও মল নরম রাখে।
২. পর্যাপ্ত পানি খাওয়ান
শিশুকে বয়স অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। গরমকালে আরও বেশি পানি দেওয়া জরুরি।
৩. ফল ও ফলের রস দিন
বিশেষ করে পেঁপে, নাশপাতি ও আপেল কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। তবে ফলের রস দেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৪. শিশুকে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করান
যতটা সম্ভব শিশুকে সক্রিয় রাখুন। হাঁটা বা খেলাধুলা করলে পরিপাকতন্ত্র সক্রিয় থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমে।
৫. নিয়মিত টয়লেট করান
শিশুকে টয়লেট ব্যবহারে উৎসাহিত করুন। সকালবেলা ও খাবার খাওয়ার পর টয়লেটে বসার অভ্যাস করান, যদি মলত্যাগ নাও হয়।
বাচ্চার পেটে হালকা করে বৃত্তাকার ম্যাসাজ করলে হজম ভালো হগরম পানিতে গোসল করালে শিশুর পেটের পেশি শিথিল হয় এবং মলত্যাগে সুবিধা হয়।য় ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমে।
কখন শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে?
নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিলে আপনার শিশুকে দ্রুত একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে নিতে হবে:
তিন দিনের বেশি সময় ধরে মলত্যাগ না করা
মলে রক্ত আসা
খাবার খেতে না চাওয়া বা বমি করা
বারবার পেট ব্যথা
একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
ডা. সালাহউদ্দিন মাহমুদ একজন অভিজ্ঞ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ যিনি নিয়মিত শিশুদের হজমজনিত সমস্যা, অপুষ্টি, কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে সেবা প্রদান করে থাকেন। আপনার শিশুর যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ঘন ঘন হয়ে থাকে, তবে দেরি না করে আজই পরামর্শ নিন।
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হলো মলত্যাগে দেরি হওয়া, মল শক্ত হয়ে যাওয়া অথবা মলত্যাগে কষ্ট হওয়া। সাধারণত সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ হলে একে কোষ্ঠকাঠিন্য ধরা হয়।
কম ফাইবারযুক্ত খাবার, পর্যাপ্ত পানি না পান করা, টয়লেট ধরে রাখা, এবং দৈহিক পরিশ্রমের অভাব কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রধান কারণ।
শক্ত মল, মলত্যাগের সময় কান্না বা কষ্ট, পেটে ব্যথা, এবং মাঝে মাঝে মলের দুর্গন্ধযুক্ত নির্গমন লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়।
শিশুকে বেশি পানি পান করানো, খাদ্যতালিকায় ফলমূল ও সবজি যোগ করা এবং নিয়মিত টয়লেট ব্যবহার উৎসাহিত করা দরকার।
যদি কোষ্ঠকাঠিন্য দীর্ঘদিন থাকে, রক্ত আসে, বা শিশু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়—তাহলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।