শিশুর খাবারে অরুচি কেন হয়, কি করবেন?

বাবা-মায়ের কাছে শিশুদের প্রতি সবচেয়ে বেশি যে অভিযোগটি পাওয়া যায়, সেটি হচ্ছে বাচ্চা কিছু খেতে চায় না। এটা খেতে চায় না, ওটা খেতে চায় না কিংবা কোনো খাবারই ঠিকমতো খায় না। শিশুর এই অরুচি এখন একটি জাতীয় সমস্যায় পরিনত হয়েছে। শিশুর খাবারে অরুচি একদিকে যেমন বাবা-মাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়, অন্যদিকে শিশুকে নানা রকম অসুস্থতার দিকে নিয়ে যায়। বিষয়টি খুব সামান্য মনে হলেও পরিনতি বেশ গুরুতর হতে পারে।

সাধারনত শিশুর খাবারে অরুচির পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে শরীরে ভিটামিন ও বিভিন্ন পুষ্টির ঘাটতি; এছাড়া বিভিন্ন রোগ এবং খাবার খাওয়ানোর অভ্যাসগত কারণও গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাবা-মায়ের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও শিশুর সঠিক যত্নের কথা চিন্তা করে, শিশুর খাবারে অরুচি কেন হয় এবং করণীয় সম্পর্কে কার্যকারী পরামর্শ দিয়েছেন, বাংলাদেশের অন্যতম সেরা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞডা: সালাহউদ্দিন মাহমুদ

পরামর্শ পেতে কল করুন: 09666-787806 শিশুর খাবারে অরুচি কেন হয়, কি করবেন?

শিশুর খাবারে অরুচির কারণসমূহ

শিশুর খাবারে অরুচি দিন দিন মহামারি আকার ধারন করছে। এজন্য সবার আগে যে বিষয়টি জানা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে, ঠিক কি কি কারণে শিশুর খাবারে অরুচি হয়ে থাকে। এখানে আমরা শিশুর খাবারে অরুচি হওয়ার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। জলুন জেনে নেওয়া যাক:

01

অপুষ্টিজনিত কারণ

জিংকের ঘাটতি

শিশুর শরীরে জিংকের অভাব হলে রুচি কমে যায়। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলিজা ও বাদাম জিংকের ভালো উৎস। শাকসবজি থেকেও জিংক পাওয়া যায়, তবে প্রাণিজ উৎস থেকে জিংক পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

ভিটামিন বি-১২ এর অভাব

ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতিও অরুচির একটি কারণ হতে পারে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ বিভিন্ন রঙিন শাকসবজিতে ভিটামিন বি-১২ পাওয়া যায়।

অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার অভাব

অন্ত্রে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার অভাব হলে পুষ্টি শোষণে সমস্যা হয়, যা অরুচির কারণ হতে পারে। টক দই, ঘোল, পান্তাভাত প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার।

ভিটামিন ডি ও সি এর অভাব

ভিটামিন ডি এর ঘাটতি শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ধীর করে এবং খাওয়ার চাহিদা কমায়। ভিটামিন সি এর অভাবেও ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে। সূর্যের আলো, ফলমূল ও শাকসবজি এই ভিটামিনগুলোর ভালো উৎস।

লাইসিন অ্যামিনো অ্যাসিডের ঘাটতি

লাইসিন ক্যালসিয়ামের শোষণ বৃদ্ধি করে এবং পরিপাকতন্ত্রের ক্ষমতা বাড়ায়। চাল ও ডাল মিশিয়ে রান্না করা খিচুড়িতে লাইসিন পাওয়া যায়।

02

খাবার খাওয়ার অভ্যাসগত কারণ

খাদ্যের প্রাচুর্য

শিশুরা যদি একটি খাবার না খেতে চায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে বিকল্প খাবার দেওয়া হলে তাদের মধ্যে খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হতে পারে।

রাতে দেরি করে ঘুমানো

রাতে দেরি করে ঘুমানো এবং সকালে দেরি করে ওঠার অভ্যাস শিশুর হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা অরুচির কারণ হতে পারে।

একঘেয়েমি খাবার

প্রতিদিন একই রকম খাবার পেলে শিশুরা উৎসাহ হারায়। নতুন স্বাদ ও টেক্সচারের অভাব থাকলে তারা খেতে চায় না।

খেলনা বা মোবাইল দেখে খাওয়ানো

অনেক সময় শিশু মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং খাওয়াকে গুরুত্বহীন মনে করে। এভাবে খাবারের প্রতি দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।

03

অসুস্থতাজনিত কারণ

পেটের সমস্যা

পেটের পরিপাক তথা হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যায় শিশুর খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হতে পারে। যেমন: কনস্টিপেশন, গ্যাস, অ্যাসিডিটি বা পেট ফাঁপা থাকলে শিশুর খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়।

জ্বর বা সংক্রমণ

সাধারণত জ্বর বা সর্দি হলে শিশুরা এক্টু নিস্তেজ হয়ে পড়ে। শরীর দূর্বল ও খাবার তিতা অনুভূত হওয়ায় শিশুরা খেতে চায় না। অন্যদিকে সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা বা শরীরে সংক্রমণ থাকলে অস্থায়ীভাবে অরুচি দেখা দিতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য

কোষ্ঠকাঠিন্য শিশুর অরুচির একটি সাধারণ কারণ। নিয়মিত টয়লেট না হওয়ায় শিশুর খাবারে অরুচি আসতে পারে। পাতাযুক্ত শাক, আঁশযুক্ত সবজি, আঙুর, কলা, ইসবগুলের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়ক।

কৃমির সংক্রমণ

কৃমির সংক্রমণ শিশুদের জন্য মারাত্বক একটি সমস্যা। এর ফলে শিশুর ক্ষুধামন্দা, বমিবমি ভাব বিরাজ করে, যা শিশুর রুচি কমিয়ে দিতে পারে। নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

গবেষণায় দেখা গেছে, নানা রকম ওষুধ সেবনের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শিশুর খাবারে অরুচি হতে পারে। কিছু ওষুধ (যেমন: অ্যান্টিবায়োটিক) খাওয়ার পর ক্ষুধা কমে যায়।

শিশুর খাবারে অরুচির লক্ষণ

যে বিষয়গুলো দেখা দিলে বুঝে নিতে হবে আপনার শিশু খাবারের অরুচিতে ভুগছে, সেসব লক্ষণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো। সাধারণত বাবা-মারা এগুলো এড়িয়ে যায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে শিশুর অরুচি অনেক বড় বিপজ্জনক হতে পারে। চলুন তাহলে লক্ষ্মণগুলো জেনে নেই:

  • খাবার দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া
  • বারবার খাওয়াতে দেরি হওয়া
  • জোর করলেও মুখ না খুলে থাকা
  • অল্প খেলেই উদর পূর্ণ মনে হওয়া
  • ওজন না বাড়া বা কমে যাওয়া
শিশুর খাবারে অরুচি নিয়ে দুশ্চিন্তা! জানুন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ!

দেশের অভিজ্ঞ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে এখনই জেনে নিন করণীয়।

পরামর্শ পেতে কল করুন: 09666-787806

শিশুর খাবারে অরুচি দূর করার কার্যকর পরামর্শ| কী করবেন?

শিশু খেতে না চাইলে বাবা-মা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যান এবং কখনো কখনো জোরাজুরি করেন কিংবা মারপিট করতেও দেখা যায়। এই ধরনের আচরন শিশুকে আরো বিপথে নিয়ে যায়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, শিশুর খাবারে অরুচি হলে কি করবেন:

রুটিন মেনে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ুন
  • রুটিন মেনে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ুন: নিয়মিত সময় অনুযায়ী ৩ বেলা প্রধান খাবার ও ২ বেলা হালকা খাবার দিন।
  • নতুন নতুন খাবার যুক্ত করুন: রঙিন ও মজার প্রেজেন্টেশনে ফল, সবজি, মাছ-মাংস, দুধ ইত্যাদি পরিবেশন করুন।
  • খাবারের পরিবেশ আনন্দদায়ক করুন: টিভি, মোবাইল বন্ধ রেখে পরিবারের সদস্যদের সাথে বসে খেতে উৎসাহ দিন।
  • জোর করবেন না: শিশুকে জোর করে খাওয়ালে তাদের খাওয়ার প্রতি আরও বিতৃষ্ণা তৈরি হয়। বরং ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন।
  • হালকা ব্যায়াম বা খেলাধুলা করান: শিশুদের শরীরচর্চা ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • ছোট পরিমাণে বারবার খাওয়ান: একবারে অনেক খাওয়ানোর বদলে ছোট ছোট ভাগে দিন।
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান: অত্যধিক অরুচি থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে হিমোগ্লোবিন, আয়রন, কৃমি ও পুষ্টি ঘাটতির পরীক্ষা করান।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?

শিশুর মধ্যে যদি নিচের এই লক্ষণগুলো দেখা যায়, তাহলে দ্রুত একজন শিশু বিশেষজ্ঞ এর শরণাপন্ন হওয়া উচিত। গুরুতর লক্ষ্মণগুলো জেনে নেওয়া যাক:

  • শিশুর ওজন নিয়মিত কমে যাচ্ছে
  • ৭ দিনের বেশি অরুচি থাকছে
  • বমি, জ্বর, পেট ব্যথা বা ডায়রিয়া হচ্ছে
  • শিশু দুর্বল হয়ে পড়ছে বা উদাসীন দেখাচ্ছে

একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন

শিশুর অবস্থা যদি আশঙ্কাজনক হয় এবং অরুচির মাত্রা যদি অনেক বেশি হয়, তাহলে ঘরোয়া চিকিৎসা হয়তো ফলপ্রসূ হবে না। এজন্য দরকার দ্রুত একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। সেক্ষেত্রে ডা: সালাহউদ্দিন মাহমুদ হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ, কারণ তিনি বাংলাদেশের একজন অন্যতম সেরা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ–যিনি বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে দীর্ঘ ২৩ বছরের অধিক সময় ধরে সেবা প্রদান করছেন।

এপয়েন্টমেন্ট বুক করুন: 09666-787806

শিশুর খাবারে অরুচি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

শিশুর অরুচির পেছনে অপুষ্টিজনিত কারণ যেমন জিংক, আয়রন, ভিটামিন বি-১২ ও ডি এর ঘাটতি থাকতে পারে। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য, কৃমি, অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতা কিংবা অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাসও দায়ী হতে পারে।

সহজপাচ্য, ঘরে তৈরি সুষম খাবার যেমন খিচুড়ি, ডিম, মাছ, কলিজা, শাকসবজি, ফলমূল এবং প্রোবায়োটিক খাবার (যেমন: টক দই, পান্তাভাত) খাওয়ানো ভালো। পাশাপাশি খাবার আকর্ষণীয়ভাবে পরিবেশন করুন।

হ্যাঁ, দুধে কিছু পুষ্টি থাকলেও তা পূর্ণ সুষম খাবার নয়। দীর্ঘদিন শুধু দুধ খাওয়ালে আয়রন, ফাইবার ও অন্যান্য ভিটামিনের ঘাটতি হয়, যা অরুচি আরও বাড়াতে পারে।

না, জোর করে খাওয়ালে শিশুর মানসিক বিরক্তি বাড়ে এবং খাবারের প্রতি ভীতি তৈরি হতে পারে। বরং আনন্দময় পরিবেশে, ছোট পরিমাণে বারবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

যদি শিশুর অরুচি ২ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, ওজন কমতে থাকে বা শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Call Receptionist
Call for Appointment
Popular Diagnostic Centre Ltd. (Shyamoli)
CTA Phone Icon 09666-787806
For More Information
CTA Phone Icon 01339364083
Make An Appoinment
Arrow