শিশুর পেটে ব্যাথার কারণ | কেন হয়, কী করবেন?

শিশুরদের অত্যন্ত পরিচিত রোগের মধ্যে পেট ব্যাথা অন্যতম। শিশুরা প্রায়ই পেটব্যথার কথা বাবা-মাকে বলে থাকে। খাবার-দাবার, জীবন-যাপনের পদ্ধতি কিংবা নানা ধরনের জিবানু কৃমি ইত্যাদির কারণে শিশুর পেটে ব্যাথা হতে পারে। শিশুর পেট ব্যাথার ঘটনা ইদানিং খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। যা বেশ আশঙ্কার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিশুদের মধ্যে পেটের অসুস্থতা (যেমন কৃমি, হজমজনিত সমস্যা, সংক্রমণ) অত্যন্ত প্রচলিত, যা পেটে ব্যথার অন্যতম কারণ। আমাদের দেশে প্রায় ৩০%–৪০% শিশু জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে নিয়মিত বা পুনরাবৃত্ত পেটে ব্যথায় ভোগে।

কয়েক বছর পুর্বে ঢাকা শিশু হাসপাতাল-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৯.৪৪% কিশোর-কিশোরী (৯–১৮ বছর বয়সী) নিয়মিত পেটে ব্যথার কারণে ভর্তি হয়েছিল। এদের মধ্যে সর্বাধিক ছিল "ফাংশনাল অ্যাবডোমিনাল পেইন" (৪৪.১২%)। তবে সব সময়, পেট ব্যাথা বড় কোনো রোগের লক্ষণ নাও হতে পারে। কখনো হজমের সমস্যা, কখনো গ্যাস বা খাবারে অ্যালার্জি ইত্যাদির কারণেও হতে পারে। আবার কোনো কোনো সময় এই সাধারণ ব্যথার মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে মারাত্মক সমস্যা। তাই সবসময় একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এই ব্লগে আমরা জানব শিশুর পেটে ব্যথার সাধারণ ও জটিল কারণগুলো, কবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, এবং কীভাবে পিতামাতারা সচেতন থাকতে পারেন।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন :০৯৬৬৬-৭৮৭৮০৬ শিশুর পেটে ব্যাথার কারণ

শিশুর পেটে ব্যথার প্রধান লক্ষণগুলো কি কি?

শিশুর পেট ব্যাথার একাধিক কারণ রয়েছে, যেটা জানা বাবা-মায়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি। অনেক ক্ষেত্রে এই পেট ব্যাথা থেকেই হতে পারে মারাত্বক কোনো জটিলতা। বাবা-মা প্রায়ই শিশুর পেট ব্যাথাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চায় না, সঠিক যত্নের ব্যাপারেও থাকেন বেশ উদাসীন। তাই শিশুর পেট ব্যাথার প্রধান লক্ষণগুলো এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে, যার ফলে সঠিকভাবে পরিচর্যা করা সহজ হবে। জেনে নিন এখনই:

  1. হঠাৎ কান্না শুরু করা: ব্যথা শুরু হলে শিশু সাধারণত হঠাৎ কান্না করে এবং সহজে শান্ত হয় না।
  2. পেট চেপে ধরা বা হাত দিয়ে চাপা দেওয়া: শিশুরা পেটের ব্যথা অনুভব করলে তারা পেটের ওপর হাত রেখে বারবার ঘষে বা চেপে ধরে।
  3. খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা: ব্যথার কারণে শিশুর ক্ষুধা কমে যায় বা একেবারেই খেতে চায় না।
  4. বমি বা বমি বমি ভাব: পেটের সংক্রমণ বা গ্যাসের কারণে শিশুর বমি হতে পারে।
  5. ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য: পেটব্যথার সঙ্গে অনেক সময় পাতলা পায়খানা বা মলত্যাগে কষ্ট হতে পারে।
  6. জ্বর: সংক্রমণজনিত পেটব্যথার ক্ষেত্রে জ্বর একটি সাধারণ লক্ষণ।
  7. ঘন ঘন শোয়া বা নড়াচড়া না করা: শিশু ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে চুপচাপ শুয়ে থাকতে পারে এবং নড়াচড়া কমিয়ে দেয়।
  8. পেট ফুলে যাওয়া: গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা কৃমির কারণে শিশুর পেট ফুলে যেতে পারে।
  9. মলত্যাগের পরিবর্তন: ব্যথার সঙ্গে মলের রঙ, গন্ধ বা স্বাভাবিকতা বদলে যেতে পারে।
  10. ঘন ঘন প্রস্রাব বা প্রস্রাবের সময় অস্বস্তি: কিছু কিছু ক্ষেত্রে (যেমন ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) পেটব্যথার সঙ্গে প্রস্রাবজনিত লক্ষণও থাকে।

শিশুর পেট ব্যাথার সাধারণ করণ সমুহ

যেকোনো ক্ষেত্রে রোগ হওয়ার আগে সচেতনতা বেশ গুরুত্বপুর্ণ। শিশুর যাতে পেট ব্যাথা না হয় সেজন্য পেট ব্যাথার কারণগুলো জানা অতীব জরুরি। বিশেষ করে বাবা-মাকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। নিন্মে আমরা শিশুর পেট ব্যাথার হওয়ার বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ণ কারণ উল্লেখ করছি:

০১

হজমের সমস্যা

শিশুরা অনেক সময় একসাথে বেশি খাবার খায়, আবার চকলেট, চিপস বা তেল-ঝাল খাবার খেলেও হজমের সমস্যা হতে পারে।

হজমে সমস্যার লক্ষণ:

  • ঢেকুর উঠা
  • পেটে ফাঁপা ভাব
  • পায়খানায় অস্বস্তি
০২

কোষ্ঠকাঠিন্য

অনেক শিশু দিনে ঠিকমতো পানি খায় না বা সবজি খেতে চায় না। এতে তাদের পায়খানা শক্ত হয় এবং পেটব্যথা দেখা দেয়।

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ:

  • ২-৩ দিনেও পায়খানা না হওয়া
  • পায়খানার সময় ব্যথা
  • পেট ফোলা
০৩

গ্যাসের সমস্যা

পেটের গ্যাস শিশুর অস্বস্তির অন্যতম কারণ। নতুন খাবার খেলে বা অতিরিক্ত কান্না করার সময় পেটে বাতাস ঢুকেও গ্যাস হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত দূধপান, ভাজা-পোড়া, চিপস ও অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহনেও এই সমস্যা হতে পারে।

গ্যাসের সমস্যার লক্ষণ:

  • পেটে চাপ অনুভব
  • বারবার পেট ঢেকে থাকা
  • চিৎকার করে কাঁদা
০৪

ভাইরাসজনিত সংক্রমণ

সাধারণ লক্ষণ:

এই সমস্যা সাধারণত ২–৫ দিন স্থায়ী হয়। শিশুর পেটব্যথার সঙ্গে ডায়রিয়া বা বমি দেখা যায়।/P>

গ্যাসের সমস্যার লক্ষণ:

  • জ্বর
  • পাতলা পায়খানা
  • দুর্বলতা

বাচ্চার পেট ব্যাথা | কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন?

আমাদের বাবা-মায়েরা শিশুদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় বেশ উদাসীন। পেট ব্যাথাকে খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে থাকেন না। তবে পেট ব্যাথা সংক্রান্ত বেশ কিছু জটিল লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা দেখা মাত্রই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অতীব জরুরি। যদি নিচের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন:

  • ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পেটব্যথা
  • বমির সঙ্গে রক্ত বা সবুজ রঙের তরল
  • খুব বেশি দুর্বলতা বা অচেতনভাব
  • পায়খানায় রক্ত
  • পেট ফোলা ও স্পর্শ করলে ব্যথা
বাচ্চার পেট ব্যাথা

শিশুর পেটব্যথা প্রতিরোধে করণীয়

শিশুর পেট ব্যাথা প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিশুর পিতামাতার সচেতনতা। খাদ্যাভ্যাস, খাবারের মেনু, এবং পরিচ্ছন্নতা অনেক বেশি দায়ী শিশুর পেট ব্যাথার যথার্থ কারণ হিসেবে। নিন্মে শিশুর পেট ব্যাথা প্রতিরোধে বেশ কিছু করণীয় উল্লেখ করা হলো:

  • নিয়মিত পরিষ্কার পানি পান করানো
  • ঘরের তৈরি সহজপাচ্য খাবার খাওয়ানো
  • ফাস্ট ফুড ও অতিরিক্ত চিনি পরিহার
  • প্রতিদিন নিয়মিত পায়খানা করার অভ্যাস গড়ে তোলা
  • হাত ধোয়ার অভ্যাস শেখানো

প্রয়োজনে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন

শিশুরা খুব সংবেদনশীল ও দূর্বল হয়ে থাকে, তাই তাদের যেকোনো অসুস্থতার ক্ষেত্রে বাড়তি নজর আমাদের দিতে হবে। পেট ব্যাথা আমাদের কাছে অনেক সময়ই বেশ তুচ্ছ বিষয় মনে হয়, কিন্তু এর কারনেও অনেক মারাত্মক কিছু ঘটে যেতে পারে। এজন্য সঠিক সময়ে ও সঠিক ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। শিশুর পেট ব্যাথা নিয়ে এবং এর চিকিৎসা নিয়ে এখন আর দুশ্চিন্তার কিছু নেই, যোগাযোগ করুন, Prof. Dr. Salahuddin Mahmud, এর সাথে, যিনি বাংলাদেশের একজন অভিজ্ঞ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। ২৩ বছরের অধিক সময় ধরে তিনি শিশুদের পেটের নানা সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করছেন।

যোগাযোগ করুন:০৯৬৬৬-৭৮৭৮০৬

শিশুর পেট ব্যাথা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

শিশুর পেট ব্যথার সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমের সমস্যা, কৃমি, ইনফেকশন, খাবারের অ্যালার্জি অথবা ভাইরাসজনিত রোগ।

যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, বমি, জ্বর, পাতলা পায়খানা, পেট ফুলে যাওয়া, বা শিশুর মুখে পানি না থাকে—তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

হালকা গরম পানির সেঁক দেওয়া, বিশ্রাম নিশ্চিত করা, সহজপাচ্য খাবার খাওয়ানো এবং পানিশূন্যতা এড়াতে তরল গ্রহণ করানো যেতে পারে।

হ্যাঁ, যদি ঘন ঘন পেট ব্যাথা হয়, তা ফাংশনাল অ্যাবডোমিনাল পেইন, ইউরিনারি ইনফেকশন, কিডনি সমস্যা বা ফুড ইন্টলারেন্সের ইঙ্গিত হতে পারে। সঠিক পরীক্ষা দরকার।

শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাবার দেওয়া, বাইরের খাবার পরিহার করা, সময়মতো কৃমির ওষুধ খাওয়ানো এবং হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।

Call Receptionist
Call for Appointment
Popular Diagnostic Centre Ltd. (Shyamoli)
CTA Phone Icon 09666-787806
For More Information
CTA Phone Icon 01339364083
Make An Appoinment
Arrow